ভিখারীর আত্মকাহিনী
প্রথম খন্ড
রচনাকাল : ৮ শ্রাবন ১৩৮১ - ১৯ ভাদ্র ১৩৮২
চরপূর্বাভাস ও জন্ম (১১৫৮ - ১৩০৭)
ছবি ও জলের কল (১৩২২)
মুন্সি আহাম্মদ দেওয়ান (১৩২৩)
পলায়ন (১৩২৪)
মুন্সি আপছার উদ্দিন (১৩২৫)
আরবী শিক্ষায় উদ্যোগ (১৩২৬)
চিকিৎসা শিক্ষা (১৩৩০)
জীবন প্রবাহের গতি (১৩৩১)
ছুতার কাজ শিক্ষা (১৩৩১)
জরীপ কাজ শিক্ষা (১৩৩৩)
বস্ত্র বয়ন শিক্ষা (১৩৩৫)
উচ্চ শিক্ষার প্রচেষ্টা (১৩৩৫)
জাল বুনা শিক্ষা (১৩৩৬)
Showing posts with label ভিখারীর আত্মকাহিনী. Show all posts
Showing posts with label ভিখারীর আত্মকাহিনী. Show all posts
চরপূর্বাভাস ও জন্ম (১১৫৮ - ১৩০৭)
চরপূর্বাভাস ও জন্ম
(১১৫৮ - ১৩০৭)
শহর বরিশালের প্রায় ছয় মাইল উঃ পূঃ দিকে কীর্তন খেলা নদীর পশ্চিম তীরে চর বাড়ীয়া লামচরি” গ্রামটি অবস্থিত। সাধারণ্যে ইহা "লামচরি” নামে পরিচিত। গ্রামটির বয়স দেড়শত বছরের বেশী নয়। গ্রামটি ছিল খুবই নীচু, বছরের অধিকাংশ সময়ই থাকত জলমগ্ন। তাই এর নামকরণ হয়- “লামচরি" অর্থাৎ নীচু চর। এ গ্রামে লোকের বসবাস শুরু হয় মাত্র ১১৬২ সাল হতে। নবাগত বাসীদারা সমস্তই ছিলেন কৃষক। এই নবাগতদের মধ্যে একজন মধ্যবিত্ত কৃষক ছিলেন আমান উল্লাহ্ মাতুব্বর এবং তার তৃতীয় পুত্র এন্তাজ আলী মাতুব্বর আমার পিতা। মা বলেছেন আমার জন্ম ১৩০৭ সালের ৩রা পৌষ।
(১১৫৮ - ১৩০৭)
শহর বরিশালের প্রায় ছয় মাইল উঃ পূঃ দিকে কীর্তন খেলা নদীর পশ্চিম তীরে চর বাড়ীয়া লামচরি” গ্রামটি অবস্থিত। সাধারণ্যে ইহা "লামচরি” নামে পরিচিত। গ্রামটির বয়স দেড়শত বছরের বেশী নয়। গ্রামটি ছিল খুবই নীচু, বছরের অধিকাংশ সময়ই থাকত জলমগ্ন। তাই এর নামকরণ হয়- “লামচরি" অর্থাৎ নীচু চর। এ গ্রামে লোকের বসবাস শুরু হয় মাত্র ১১৬২ সাল হতে। নবাগত বাসীদারা সমস্তই ছিলেন কৃষক। এই নবাগতদের মধ্যে একজন মধ্যবিত্ত কৃষক ছিলেন আমান উল্লাহ্ মাতুব্বর এবং তার তৃতীয় পুত্র এন্তাজ আলী মাতুব্বর আমার পিতা। মা বলেছেন আমার জন্ম ১৩০৭ সালের ৩রা পৌষ।
মুন্সি আহাম্মদ দেওয়ান (১৩২৩)
মুন্সি আহাম্মদ দেওয়ান (১৩২৩)
১৩২৩ সালে আমার জ্ঞাতি চাচা মহব্বত আলী মাতুব্বর সা’ব আহাম্মদ আলী দেওয়ান নামক ভাসান চর নিবাসী এক জন মুন্সি রেখে তার বাড়ীতে একটি মক্তব খোলেন। আমি ঐ মক্তবে ভর্তি হলাম। এখানে আমার পাঠ্য ছিল “মক্তব প্রাইমারি" নামক একখানা বই এবং গণিতে করণীয় ছিল মিশ্র চার নিয়মের অঙ্ক। কিন্তু আমার পাঠ্যপুস্তক খানার মাত্র "আট পৃষ্ঠা" পড়া এবং "মিশ্র যোগ" অঙ্ক কয়েকটি কষা হলে মক্তব বন্ধ করে দেওয়ান সাব দেশে গিয়ে আর ফিরে এলেন না। কিছুদিন পর খবর পাওয়া গেল যে, তিনি ইহধামে নেই। মক্তবটি উঠে গেল।
১৩২৩ সালে আমার জ্ঞাতি চাচা মহব্বত আলী মাতুব্বর সা’ব আহাম্মদ আলী দেওয়ান নামক ভাসান চর নিবাসী এক জন মুন্সি রেখে তার বাড়ীতে একটি মক্তব খোলেন। আমি ঐ মক্তবে ভর্তি হলাম। এখানে আমার পাঠ্য ছিল “মক্তব প্রাইমারি" নামক একখানা বই এবং গণিতে করণীয় ছিল মিশ্র চার নিয়মের অঙ্ক। কিন্তু আমার পাঠ্যপুস্তক খানার মাত্র "আট পৃষ্ঠা" পড়া এবং "মিশ্র যোগ" অঙ্ক কয়েকটি কষা হলে মক্তব বন্ধ করে দেওয়ান সাব দেশে গিয়ে আর ফিরে এলেন না। কিছুদিন পর খবর পাওয়া গেল যে, তিনি ইহধামে নেই। মক্তবটি উঠে গেল।
পলায়ন (১৩২৪)
পলায়ন (১৩২৪)
১৩২৩ সালে আমার ভগ্নিপতি আঃ হামিদ মোল্লা আমার সেজ ভগ্নীকে নেকাহ করে এসেছেন আমাদের সংসারে। তিনি এসে আমার নীলামী সম্পত্তিটুকু জমিদারের কাছ থেকে পুনঃ পত্তন গ্রহণ করলেন। কিন্তু জমির অর্ধেক কবুলিয়ত দিয়ে নিলেন তিনি তার মাতা মেহের জান বিবির বেনামীতে এবং অর্ধেক দিলেন আমাকে (নাবালক বিধায় আমি কবুলিয়ত দিতে না পারায়) আমার মাতার বেনামীতে। এ সময় তিনি আমাদের একান্ন ভূক্ত থেকে কৃষিকাজ করতেছিলেন। আমি তাঁর মাঠের কাজে সহায়তা না করে বেয়ারাপনা ও আনাড়ী কাজ করায় তিনি ছিলেন আমার উপর অত্যন্ত রুষ্ঠ ।
১৩২৩ সালে আমার ভগ্নিপতি আঃ হামিদ মোল্লা আমার সেজ ভগ্নীকে নেকাহ করে এসেছেন আমাদের সংসারে। তিনি এসে আমার নীলামী সম্পত্তিটুকু জমিদারের কাছ থেকে পুনঃ পত্তন গ্রহণ করলেন। কিন্তু জমির অর্ধেক কবুলিয়ত দিয়ে নিলেন তিনি তার মাতা মেহের জান বিবির বেনামীতে এবং অর্ধেক দিলেন আমাকে (নাবালক বিধায় আমি কবুলিয়ত দিতে না পারায়) আমার মাতার বেনামীতে। এ সময় তিনি আমাদের একান্ন ভূক্ত থেকে কৃষিকাজ করতেছিলেন। আমি তাঁর মাঠের কাজে সহায়তা না করে বেয়ারাপনা ও আনাড়ী কাজ করায় তিনি ছিলেন আমার উপর অত্যন্ত রুষ্ঠ ।
মুন্সি আপছার উদ্দিন (১৩২৫)
মুন্সি আপছার উদ্দিন (১৩২৫)
দক্ষিণ লামচরি নিবাসী পূর্বোক্ত কাজেম আলী সরদার সাব (তাঁর জামাতা) মুন্সি আপছার উদ্দিন নামক এক জন আলেম এনে তাঁর বাড়ীতে পুনঃ মক্তব খোল্লেন। মুন্সি সাব বাংলা ভাষা ভাল জানতেন না, তবে আরবী, ফারসী ও উর্দুতে ছিলেন সুপণ্ডিত এবং সুফিও। তার মত নিষ্ঠাবান নিষ্কাম সাধু পুরুষ আলেম সমাজে অল্পই আছেন। আমি তার মক্তবে ভর্তি হলাম না, তবে সকাল-সন্ধ্যায় তার কাছে গিয়ে আরবী ও উর্দু পড়তে শুরু করলাম (১৩২৫ সালের বৈশাখ মাসের শেষ ভাগ হতে) এবং পড়লাম-পবিত্র কোরান, রাহে নাজাত ও মেফ তাহুল জান্নাত নামক দুখানা কেতাব। নামাজদি দীনিয়াতের অত্যাবশ্যকীয় বিষয় সমূহ তার কাছেই শিক্ষা করলাম।
দক্ষিণ লামচরি নিবাসী পূর্বোক্ত কাজেম আলী সরদার সাব (তাঁর জামাতা) মুন্সি আপছার উদ্দিন নামক এক জন আলেম এনে তাঁর বাড়ীতে পুনঃ মক্তব খোল্লেন। মুন্সি সাব বাংলা ভাষা ভাল জানতেন না, তবে আরবী, ফারসী ও উর্দুতে ছিলেন সুপণ্ডিত এবং সুফিও। তার মত নিষ্ঠাবান নিষ্কাম সাধু পুরুষ আলেম সমাজে অল্পই আছেন। আমি তার মক্তবে ভর্তি হলাম না, তবে সকাল-সন্ধ্যায় তার কাছে গিয়ে আরবী ও উর্দু পড়তে শুরু করলাম (১৩২৫ সালের বৈশাখ মাসের শেষ ভাগ হতে) এবং পড়লাম-পবিত্র কোরান, রাহে নাজাত ও মেফ তাহুল জান্নাত নামক দুখানা কেতাব। নামাজদি দীনিয়াতের অত্যাবশ্যকীয় বিষয় সমূহ তার কাছেই শিক্ষা করলাম।
আরবী শিক্ষায় উদ্যোগ (১৩২৬)
আরবী শিক্ষায় উদ্যোগ (১৩২৬)
১৩২৬ সাল। এখন আমার বয়স প্রায় উনিশ বছর। পিতার মৃত্যুর পর দীর্ঘ পনরটি বছর বহু দুঃখ-কষ্ট সহ্য করে মা আমাকে প্রতিপালন করছেন আর আমার দিকে চেয়ে চেয়ে ভাবছেন ও বলছেন - “আমার কুড় বড় হলে এক দিন সুখ হবে"। এখন আমি কিছুটা বড় হয়েছি। কিন্তু আমার দ্বারা মা'র কোন দুঃখ-কষ্ট লাঘব হচ্ছে না। এখনও আমাদের উভয়ের ভাতকাপড়ের চিন্তা মা-কেই করতে হচ্ছে। তবে আমি বড় হলাম কেন? কিন্তু এখন আমিই বা কি করতে পারি বা করব ভেবে পাচ্ছিলাম না।
১৩২৬ সাল। এখন আমার বয়স প্রায় উনিশ বছর। পিতার মৃত্যুর পর দীর্ঘ পনরটি বছর বহু দুঃখ-কষ্ট সহ্য করে মা আমাকে প্রতিপালন করছেন আর আমার দিকে চেয়ে চেয়ে ভাবছেন ও বলছেন - “আমার কুড় বড় হলে এক দিন সুখ হবে"। এখন আমি কিছুটা বড় হয়েছি। কিন্তু আমার দ্বারা মা'র কোন দুঃখ-কষ্ট লাঘব হচ্ছে না। এখনও আমাদের উভয়ের ভাতকাপড়ের চিন্তা মা-কেই করতে হচ্ছে। তবে আমি বড় হলাম কেন? কিন্তু এখন আমিই বা কি করতে পারি বা করব ভেবে পাচ্ছিলাম না।
জীবন প্রবাহের গতি (১৩৩১)
জীবন প্রবাহের গতি (১৩৩১)
বরিশাল চকের পোলের পূর্ব পাশে ঢাকা নিবাসী মুন্সি আলীমুদিন সাবের একখানা পুস্তকের দোকান ছিল। তিনি তাঁর দোকানে- কোরান শরীফ, কেতাব ও পুথিই রাখতেন বেশী; কিছু বাংলা বইও রাখতেন। আমি ওখানে যাতায়াত করে মুন্সি সাবের সাথে ভাব জমালাম এবং সুযোগ মত ওখানে গিয়ে বই-পুথি পড়তে লাগলাম। একদা মুন্সি সাব আমাকে "রবিনশন ক্রুশো" নামক এক খানা বই দিলেন, আমি ওখান কিনে আনলাম। নিঃসঙ্গ ও নিঃসম্বল রবিনশন বহু বছর যাবত দ্বীপবাসী থেকে কিভাবে বেঁচে থাকছিলেন, সে কাহিনী পড়ে আমার এক নুতন মানসিকতার সৃষ্টি হল। আমি ওতে দেখলাম-"মানুষের অসাধ্য কাজ নাই, ইচ্ছা থাকলে উপায় হয়, সাহসে শক্তি যোগায়" ইত্যাদি বহু প্রবাদ বচনের প্রত্যক্ষ উদাহরণ আমাকে স্বাবলম্বী হবার প্রেরণা। ওটা আমার স্মরণীয় হয়ে আছে ও থাকবে।
বরিশাল চকের পোলের পূর্ব পাশে ঢাকা নিবাসী মুন্সি আলীমুদিন সাবের একখানা পুস্তকের দোকান ছিল। তিনি তাঁর দোকানে- কোরান শরীফ, কেতাব ও পুথিই রাখতেন বেশী; কিছু বাংলা বইও রাখতেন। আমি ওখানে যাতায়াত করে মুন্সি সাবের সাথে ভাব জমালাম এবং সুযোগ মত ওখানে গিয়ে বই-পুথি পড়তে লাগলাম। একদা মুন্সি সাব আমাকে "রবিনশন ক্রুশো" নামক এক খানা বই দিলেন, আমি ওখান কিনে আনলাম। নিঃসঙ্গ ও নিঃসম্বল রবিনশন বহু বছর যাবত দ্বীপবাসী থেকে কিভাবে বেঁচে থাকছিলেন, সে কাহিনী পড়ে আমার এক নুতন মানসিকতার সৃষ্টি হল। আমি ওতে দেখলাম-"মানুষের অসাধ্য কাজ নাই, ইচ্ছা থাকলে উপায় হয়, সাহসে শক্তি যোগায়" ইত্যাদি বহু প্রবাদ বচনের প্রত্যক্ষ উদাহরণ আমাকে স্বাবলম্বী হবার প্রেরণা। ওটা আমার স্মরণীয় হয়ে আছে ও থাকবে।
ছুতার কাজ শিক্ষা (১৩৩১)
ছুতার কাজ শিক্ষা (১৩৩১)
এ যাবত আমরা ওতেই বসবাস করছি। কিন্তু এখন আর ওতে চলছে না। বিগত ৩/৯/২৯ (বাং) তারিখে স্থানীয় আয়শা বিবির নিকট হতে কিছু জমি কিনেছি এবং বাড়ীর পূর্বদিকে চর পড়িয়া কিছু জমি বৃদ্ধি হয়েছে। এতে কৃষি কাজের কিছু উন্নতি হচ্ছে ও পশার বাড়ছে। ধান, চাল, পাট, তিল, মরিচ ইত্যাদি নানা ফসলের রক্ষণাবেক্ষণ কাজে বর্তমান কুঁড়ে ঘরখানা এখন অনুপযোগী। ভাবলাম - ছোটখাট একখানা টিনের ঘর তুলব। কিন্তু ছুতার লাগাব না, কাজ সব করব নিজে।
এ যাবত আমরা ওতেই বসবাস করছি। কিন্তু এখন আর ওতে চলছে না। বিগত ৩/৯/২৯ (বাং) তারিখে স্থানীয় আয়শা বিবির নিকট হতে কিছু জমি কিনেছি এবং বাড়ীর পূর্বদিকে চর পড়িয়া কিছু জমি বৃদ্ধি হয়েছে। এতে কৃষি কাজের কিছু উন্নতি হচ্ছে ও পশার বাড়ছে। ধান, চাল, পাট, তিল, মরিচ ইত্যাদি নানা ফসলের রক্ষণাবেক্ষণ কাজে বর্তমান কুঁড়ে ঘরখানা এখন অনুপযোগী। ভাবলাম - ছোটখাট একখানা টিনের ঘর তুলব। কিন্তু ছুতার লাগাব না, কাজ সব করব নিজে।
জরীপ কাজ শিক্ষা (১৩৩৩)
জরীপ কাজ শিক্ষা (১৩৩৩)
১৩৩৩ সাল। একদা মোল্লা সাব এক বান্ডিল কাগজ আমার হাতে দিয়ে বল্লেন- "এইগুলি সারিয়া রাখিও"। ওর ভেতর ছিল- বন্দকী জমি ছাড়ানো কয়েকখানা ছেড়া দলিল, লামচরি মৌজার সি,এস ম্যাপ, পর্চা, দাখিলা, রশিদ ইত্যাদি ভূসম্পত্তি বিষয়ক কাগজপত্র। ওগুলো পড়ে দেখলাম, সব বোঝলাম না। তবে ম্যাপখানা নিয়ে বিশেষভাবে চেষ্টা করতে লাগলাম উহা ভালভাবে বোঝবার জন্য। কেননা আমার ভৌগলিক মানচিত্রগুলো আকবার ও দেখবার উৎসাহটা গড়ায়ে পড়ল এটার ওপর। ম্যাপখানা ছিল- ২০২৯ নং মৌজা চর বাড়ীয়া লামচরির ২ নং সিট। স্কেল ১৬"= ১ মাইল। এটাতে আমাদের বাড়ী, বাগান, পুকুরাদি ও নাল জমি অঙ্কিত আছে এবং খাল-নদীও । আমার পিতার নামের পর্চায় লিখিত দাগ-নম্বর সমূহ ম্যাপে মিলিয়ে দেখলাম যে, আমাদের জমি কোন কোনটা।
১৩৩৩ সাল। একদা মোল্লা সাব এক বান্ডিল কাগজ আমার হাতে দিয়ে বল্লেন- "এইগুলি সারিয়া রাখিও"। ওর ভেতর ছিল- বন্দকী জমি ছাড়ানো কয়েকখানা ছেড়া দলিল, লামচরি মৌজার সি,এস ম্যাপ, পর্চা, দাখিলা, রশিদ ইত্যাদি ভূসম্পত্তি বিষয়ক কাগজপত্র। ওগুলো পড়ে দেখলাম, সব বোঝলাম না। তবে ম্যাপখানা নিয়ে বিশেষভাবে চেষ্টা করতে লাগলাম উহা ভালভাবে বোঝবার জন্য। কেননা আমার ভৌগলিক মানচিত্রগুলো আকবার ও দেখবার উৎসাহটা গড়ায়ে পড়ল এটার ওপর। ম্যাপখানা ছিল- ২০২৯ নং মৌজা চর বাড়ীয়া লামচরির ২ নং সিট। স্কেল ১৬"= ১ মাইল। এটাতে আমাদের বাড়ী, বাগান, পুকুরাদি ও নাল জমি অঙ্কিত আছে এবং খাল-নদীও । আমার পিতার নামের পর্চায় লিখিত দাগ-নম্বর সমূহ ম্যাপে মিলিয়ে দেখলাম যে, আমাদের জমি কোন কোনটা।
বস্ত্র বয়ন শিক্ষা (১৩৩৫)
বস্ত্র বয়ন শিক্ষা (১৩৩৫)
রোগারোগ্যের পর - শুয়ে-বসে প্রায় দমাস কেটে গেলে কোন রকম চলা-ফেরার শক্তি হ’ল কিন্তু কৰ্মশক্তি হ’ল না। তখন ভাবতে ছিলাম - কি করব। সে সময় এদেশে স্বদেশী ও অসহযোগ আন্দোলন এবং টাকু-মাকু পুরাদমে চলছে। অর্থাৎ তাত ও চরকা ঘরে ঘরে। স্থির করলাম যে, বসে বসে (অল্প শ্রমের কাজ) কাপড় বোনা শিক্ষা করব।
রোগারোগ্যের পর - শুয়ে-বসে প্রায় দমাস কেটে গেলে কোন রকম চলা-ফেরার শক্তি হ’ল কিন্তু কৰ্মশক্তি হ’ল না। তখন ভাবতে ছিলাম - কি করব। সে সময় এদেশে স্বদেশী ও অসহযোগ আন্দোলন এবং টাকু-মাকু পুরাদমে চলছে। অর্থাৎ তাত ও চরকা ঘরে ঘরে। স্থির করলাম যে, বসে বসে (অল্প শ্রমের কাজ) কাপড় বোনা শিক্ষা করব।
উচ্চ শিক্ষার প্রচেষ্টা (১৩৩৫)
উচ্চ শিক্ষার প্রচেষ্টা (১৩৩৫)
আগে বলেছি যে, আমাদেরগ্রামে কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছিল না। বৃটিশ সরকারের বদৌলতে প্রতি ইউনিয়নে প্রাইমারী স্কুল ছিল একটি করিয়া (ডিঃ বোর্ড কর্তৃক পরিচালিত হত বলে ওর নাম ছিল-"বোর্ড স্কুল")। আমাদের ইউনিয়নের "বোর্ড স্কুল"ট চর বাড়ীয়া মৌজায় অবস্থিত, দূরত্ব আমাদের গ্রাম হতে প্রায় ৫ মাইল। আর বরিশাল শহর ছাড়া হাইস্কুল ছিল না এ অঞ্চলে একটিও। কাজেই ১৩৩৪ সালের পূর্বে আমাদের গ্রামের কোন ছেলে-হাই স্কুল তো দূরের কথা, প্রাইমারী স্কুল ও চিনতো না।
আগে বলেছি যে, আমাদেরগ্রামে কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছিল না। বৃটিশ সরকারের বদৌলতে প্রতি ইউনিয়নে প্রাইমারী স্কুল ছিল একটি করিয়া (ডিঃ বোর্ড কর্তৃক পরিচালিত হত বলে ওর নাম ছিল-"বোর্ড স্কুল")। আমাদের ইউনিয়নের "বোর্ড স্কুল"ট চর বাড়ীয়া মৌজায় অবস্থিত, দূরত্ব আমাদের গ্রাম হতে প্রায় ৫ মাইল। আর বরিশাল শহর ছাড়া হাইস্কুল ছিল না এ অঞ্চলে একটিও। কাজেই ১৩৩৪ সালের পূর্বে আমাদের গ্রামের কোন ছেলে-হাই স্কুল তো দূরের কথা, প্রাইমারী স্কুল ও চিনতো না।
জাল বুনা শিক্ষা (১৩৩৬)
জাল বুনা শিক্ষা (১৩৩৬)
ভৌগোলিক অবস্থান ভেদে বিভিন্ন দেশের প্রকৃতি বিভিন্ন এবং প্রকৃতি ভেদে বিভিন্ন দেশের উৎপন্ন বা পণ্য দ্রব্য বিভিন্ন। আবার যে দেশে যে দ্রব্য উৎপন্ন হয় বেশী, সে দেশবাসীর পক্ষে সেই দ্রব্যই হয় প্রধান আহার্য ও ব্যবহার্য। নিম্ন সমতল ও নদীবহুল এই বাংলাদেশ। তাই এদেশে ধান ও মৎস্য সম্পদের প্রাচুর্য্য। কাজেই এ দেশবাসীর সর্ব প্রধান খাদ্যই হ’ল-মাছ ও ভাত। আর এ জন্যই বলা হয়-“মাছে ভাতে বঙ্গালী তুষ্ট"। এ কথাটা আমাদের গ্রামের পক্ষে বেশী সত্য। কেননা এ গ্রামটির প্রায় সব দিকেই নদী এবং ভিতরে ছোট-বড় খালও আছে পাঁচ-ছয়টি। নদী ও খাল গুলোতে প্রচুর মাছ পাওয়া যায় বারো মাসই, যদি কেউ ধরতে জানে ও পারে।
ভৌগোলিক অবস্থান ভেদে বিভিন্ন দেশের প্রকৃতি বিভিন্ন এবং প্রকৃতি ভেদে বিভিন্ন দেশের উৎপন্ন বা পণ্য দ্রব্য বিভিন্ন। আবার যে দেশে যে দ্রব্য উৎপন্ন হয় বেশী, সে দেশবাসীর পক্ষে সেই দ্রব্যই হয় প্রধান আহার্য ও ব্যবহার্য। নিম্ন সমতল ও নদীবহুল এই বাংলাদেশ। তাই এদেশে ধান ও মৎস্য সম্পদের প্রাচুর্য্য। কাজেই এ দেশবাসীর সর্ব প্রধান খাদ্যই হ’ল-মাছ ও ভাত। আর এ জন্যই বলা হয়-“মাছে ভাতে বঙ্গালী তুষ্ট"। এ কথাটা আমাদের গ্রামের পক্ষে বেশী সত্য। কেননা এ গ্রামটির প্রায় সব দিকেই নদী এবং ভিতরে ছোট-বড় খালও আছে পাঁচ-ছয়টি। নদী ও খাল গুলোতে প্রচুর মাছ পাওয়া যায় বারো মাসই, যদি কেউ ধরতে জানে ও পারে।
চিকিৎসা শিক্ষা (১৩৩০)
চিকিৎসা শিক্ষা (১৩৩০)
১৩৩১ সাল। আমার জ্ঞাতি (চাচাত) ভ্রাতা আঃ রহিম (রহম আলী) মৃধা বেড়াতে যাবেন তাঁর বেহাই (মৃধা সাবের পুত্র ফজলুর রহমানের শ্বশুর) এমদাদ উল্লা কাজীর বাড়ীতে (কালীগঞ্জ)। মৃধা সাব ছিলেন- ধনে, মানে, জ্ঞানে, গুণে, এ অঞ্চলের সেরা ব্যক্তি। তিনি তার অনান্য কুটুম্ব ও সব জ্ঞাতি ভাইদের দাওয়াত করলেন এবং আমাকেও। অধিকন্তু আমাকে আমার গানের দ্বোহারগণকে নিয়ে যেতে বল্লেন। তিনি যাবেন সেখানে "পয়নামা" নিয়ে খুব ধুমধামের সহিত, সেখানে আমাকে গান করতে হবে। নির্দিষ্ট দিনে যথা সময়ে আমরা কাজী বাড়ী গেলাম এবং সবাই বৈঠকখানা ঘরে বসলাম। ঘরের মধ্যভাগটা -গেদী, বালিশ তাকিয়া ইত্যাদি নানা উপকরনে সাজানো। মৃধা সাব ও আমার অন্যান্য জ্ঞাতি ভাইয়েরা ওখানেই বসলেন। কিন্তু আমাকে বসতে দেওয়া হ’ল বারান্দায়। কারণ-আমি "বয়াতী”। গান করলাম। বাড়ীওয়ালা পুরষ্কার দিলেন দশ টাকা। কথায় বলে "যাক জান, থাক মান"। অর্থাৎ মানহানীর চেয়ে প্রাণহানী ভাল। আত্ম মর্যাদায় আঘাত পেয়ে সেদিন মনে মনে প্রতিজ্ঞা করলাম-বেঁচে থাকতে আর কখনো গান করব না, চেষ্টা করে দেখব কোনো দিন মৃধা সাবের পাশে বসতে পারি কি-না। (চেষ্টায় সফলতা লাভ করেছিলাম তখন, যখন১৩৩৯ সালে চর বাড়ীয়া ইউনিয়ন বোর্ডের প্রথম পদে নিবাচিত হলাম এবং ১৩৪৩ সালের নির্বাচনেও উভয়ে পুনঃ উহার “সদস্য" পদে নির্বাচিত হলাম। অধিকন্তু আমি হলাম নির্বাচিত "সহ সভাপতি" মৃধা সাব নন। এতদ্ভিন্ন -আমি তার সামনেই সরকার কর্তৃক মনোনিত হয়েছিলাম ১৩৪৬ সালে স্থানীয় ডি, এস বোর্ডের "সদস্য" এবং ১৩৪৮ সালে চর বাড়ীয়া ইউনিয়ন জুট কমিটির "সহ সভাপতি"।)
১৩৩১ সাল। আমার জ্ঞাতি (চাচাত) ভ্রাতা আঃ রহিম (রহম আলী) মৃধা বেড়াতে যাবেন তাঁর বেহাই (মৃধা সাবের পুত্র ফজলুর রহমানের শ্বশুর) এমদাদ উল্লা কাজীর বাড়ীতে (কালীগঞ্জ)। মৃধা সাব ছিলেন- ধনে, মানে, জ্ঞানে, গুণে, এ অঞ্চলের সেরা ব্যক্তি। তিনি তার অনান্য কুটুম্ব ও সব জ্ঞাতি ভাইদের দাওয়াত করলেন এবং আমাকেও। অধিকন্তু আমাকে আমার গানের দ্বোহারগণকে নিয়ে যেতে বল্লেন। তিনি যাবেন সেখানে "পয়নামা" নিয়ে খুব ধুমধামের সহিত, সেখানে আমাকে গান করতে হবে। নির্দিষ্ট দিনে যথা সময়ে আমরা কাজী বাড়ী গেলাম এবং সবাই বৈঠকখানা ঘরে বসলাম। ঘরের মধ্যভাগটা -গেদী, বালিশ তাকিয়া ইত্যাদি নানা উপকরনে সাজানো। মৃধা সাব ও আমার অন্যান্য জ্ঞাতি ভাইয়েরা ওখানেই বসলেন। কিন্তু আমাকে বসতে দেওয়া হ’ল বারান্দায়। কারণ-আমি "বয়াতী”। গান করলাম। বাড়ীওয়ালা পুরষ্কার দিলেন দশ টাকা। কথায় বলে "যাক জান, থাক মান"। অর্থাৎ মানহানীর চেয়ে প্রাণহানী ভাল। আত্ম মর্যাদায় আঘাত পেয়ে সেদিন মনে মনে প্রতিজ্ঞা করলাম-বেঁচে থাকতে আর কখনো গান করব না, চেষ্টা করে দেখব কোনো দিন মৃধা সাবের পাশে বসতে পারি কি-না। (চেষ্টায় সফলতা লাভ করেছিলাম তখন, যখন১৩৩৯ সালে চর বাড়ীয়া ইউনিয়ন বোর্ডের প্রথম পদে নিবাচিত হলাম এবং ১৩৪৩ সালের নির্বাচনেও উভয়ে পুনঃ উহার “সদস্য" পদে নির্বাচিত হলাম। অধিকন্তু আমি হলাম নির্বাচিত "সহ সভাপতি" মৃধা সাব নন। এতদ্ভিন্ন -আমি তার সামনেই সরকার কর্তৃক মনোনিত হয়েছিলাম ১৩৪৬ সালে স্থানীয় ডি, এস বোর্ডের "সদস্য" এবং ১৩৪৮ সালে চর বাড়ীয়া ইউনিয়ন জুট কমিটির "সহ সভাপতি"।)
ছবি ও জলের কল (১৩২২)
ছবি ও জলের কল (১৩২২)
মক্তবটি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সকালে-বিকেলে দীর্ঘ লাফ ও দুপুরে-খালের জলে ডুব-সাঁতার ইত্যাদি খেলা-ধুলা নিত্যকার কাজ হয়ে দাঁড়াল এ পাড়ার সব ছেলেদের এবং আমারও। কিন্তু এতদ্ভিন্ন আরও দুটি কাজের প্রবণতা ছিল আমার। যাহা অন্য কোন ছেলের ছিল না। সে কাজ দুটি হলো-ছবি আঁকা ও জলের কল তৈরী করা
কেন, জানি না, আমি ছবি ভাল বাসতাম। “বাল্য শিক্ষা" ও অন্যান্য বইয়ের পাতা উল্টিয়ে আমি উহা বার বার দেখতাম এবং ওগুলি নিজ হাতে আঁকিবার নিষ্ফল চেষ্টা করতাম।
এ সময় (১৩২২ সাল) বরিশালে “জলের কল" স্থাপিত হতেছিল। বরিশালে যাতায়াতের পথে আমি উহা মনোযোগের সহিত দেখতাম ও দেখে আনন্দ পেতাম এবং বাড়ীতে এসে কৃত্রিম “জলের কল” তৈয়ার করতাম।
মক্তবটি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সকালে-বিকেলে দীর্ঘ লাফ ও দুপুরে-খালের জলে ডুব-সাঁতার ইত্যাদি খেলা-ধুলা নিত্যকার কাজ হয়ে দাঁড়াল এ পাড়ার সব ছেলেদের এবং আমারও। কিন্তু এতদ্ভিন্ন আরও দুটি কাজের প্রবণতা ছিল আমার। যাহা অন্য কোন ছেলের ছিল না। সে কাজ দুটি হলো-ছবি আঁকা ও জলের কল তৈরী করা
কেন, জানি না, আমি ছবি ভাল বাসতাম। “বাল্য শিক্ষা" ও অন্যান্য বইয়ের পাতা উল্টিয়ে আমি উহা বার বার দেখতাম এবং ওগুলি নিজ হাতে আঁকিবার নিষ্ফল চেষ্টা করতাম।
এ সময় (১৩২২ সাল) বরিশালে “জলের কল" স্থাপিত হতেছিল। বরিশালে যাতায়াতের পথে আমি উহা মনোযোগের সহিত দেখতাম ও দেখে আনন্দ পেতাম এবং বাড়ীতে এসে কৃত্রিম “জলের কল” তৈয়ার করতাম।